যশোরে ৩ বছর ধরে অকেজো ১,২৯৩টি ডিজিটাল হাজিরা মেশিন, ফিরেছে খাতার যুগ

হুমায়ন কবির মিরাজ, যশোর জেলা প্রতিনিধিঃ
যশোরে ৩ বছর ধরে অকেজো ১,২৯৩টি ডিজিটাল হাজিরা মেশিন, ফিরেছে খাতার যুগ, খবরপত্র ছবি:
যশোরে ৩ বছর ধরে অকেজো ১,২৯৩টি ডিজিটাল হাজিরা মেশিন, ফিরেছে খাতার যুগ, খবরপত্র ছবি:

যশোর জেলার ১,২৯৩টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে স্থাপিত ডিজিটাল হাজিরা মেশিন তিন বছর ধরে অকেজো হয়ে পড়ে আছে। দীর্ঘদিন ধরে মেশিনগুলো নষ্ট থাকলেও এগুলো সংস্কার বা পুনঃচালুর বিষয়ে কোনো কার্যকর উদ্যোগ নেয়নি সংশ্লিষ্ট জেলা বা উপজেলা শিক্ষা দপ্তর। ফলে বিদ্যালয়গুলোতে এখন আবারও খাতায় হাতে লিখে শিক্ষার্থীদের হাজিরা নিতে হচ্ছে।

২০১৮ সালে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের অর্থায়নে যশোর জেলার প্রতিটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ডিজিটাল হাজিরা মেশিন স্থাপন করা হয়। লক্ষ্য ছিল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর উপস্থিতি ও ব্যবস্থাপনায় স্বচ্ছতা ও প্রযুক্তিনির্ভরতা নিশ্চিত করা। একই সময়ে চালু করা হয় মাল্টিমিডিয়া পদ্ধতিতে পাঠদান। মাল্টিমিডিয়া ক্লাস এখনো চালু থাকলেও হাজিরা কার্যক্রমে ফিরে যাওয়া হয়েছে পুরনো ‘এনালগ’ পদ্ধতিতে।

সদর উপজেলার বালিয়াডাঙ্গা মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জেসমিন আক্তার বলেন, “স্থাপনের এক বছর পরই মেশিনের স্ক্রিন ঘোলা হয়ে নষ্ট হয়ে যায়। এরপর আর চালু করা সম্ভব হয়নি।”

ইন্সটিটিউট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সৈয়দা শিরিন সুলতানা জানান, “মেশিন স্থাপনের দেড় বছর পর থেকেই আঙুলের ছাপ সনাক্ত করতে পারছিল না। ২০২০ সালে করোনার সময় বিদ্যালয় বন্ধ থাকায় মেশিন পুরোপুরি অকার্যকর হয়ে পড়ে।” একই অভিজ্ঞতার কথা জানিয়েছেন উপশহর শহিদ স্মরণী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শাহজাদ হোসেন বাবু।

জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস বা উপজেলা পর্যায়ের কোনো কার্যালয় থেকে এই বিষয়ে এখনো পর্যন্ত উদ্যোগ নেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ করেছেন শিক্ষকরা।

সদর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মাহাবুবুর রহমান বলেন, “শিক্ষা অধিদপ্তর থেকে এ বিষয়ে কোনো বরাদ্দ না থাকায় সংস্কার করা সম্ভব হয়নি।” চৌগাছা উপজেলা শিক্ষা অফিসার মোস্তাফিজুর রহমানও একই কথা জানান।

জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার আশরাফুল আলম বলেন, “ডিজিটাল হাজিরা মেশিন চালুর বিষয়ে অধিদপ্তর থেকে এখনো কোনো নির্দেশনা আসেনি। নির্দেশনা পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

প্রযুক্তির যুগে এসেও ডিজিটাল সুবিধা চালু রাখার ক্ষেত্রে এমন উদাসীনতা প্রশ্ন তুলছে শিক্ষা প্রশাসনের সক্ষমতা ও দায়বদ্ধতা নিয়ে। তিন বছর ধরে মেশিন অকেজো থাকলেও কোনো প্রতিবেদন তৈরি হয়নি, বরাদ্দের দাবিও ওঠেনি—এমন বাস্তবতা ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার অঙ্গীকারকে বারবার প্রশ্নবিদ্ধ করছে।

এলাকার খবর

সম্পর্কিত