বেনাপোল কাস্টমস থেকে দেড় শতাধিক এনজিও কর্মী বহিষ্কার

বিশেষ প্রতিনিধি:
বেনাপোল কাস্টমস থেকে দেড় শতাধিক এনজিও কর্মী বহিষ্কার:দুর্নীতি রোধে নতুন কমিশনারের কড়া পদক্ষেপ ছবি: খবরপত্র
বেনাপোল কাস্টমস থেকে দেড় শতাধিক এনজিও কর্মী বহিষ্কার:দুর্নীতি রোধে নতুন কমিশনারের কড়া পদক্ষেপ ছবি: খবরপত্র

বেনাপোল কাস্টমস হাউস থেকে দেড় শতাধিক বহিরাগত এনজিও কর্মীকে বহিষ্কার করেছেন নবনিযুক্ত কমিশনার খালেদ মোহাম্মদ আবু হোসেন। গত সপ্তাহে দায়িত্ব গ্রহণের পরপরই তিনি এই যুগান্তকারী পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। তবে, এদের আশ্রয়দাতা হিসেবে কাস্টমস সদস্যদের বিরুদ্ধে কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি, যা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সংশ্লিষ্টরা।

রোববার (৩ আগস্ট) বেনাপোল কাস্টমসে বহিরাগতদের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হলে এনজিও সদস্যরা কাস্টমস চত্বর ত্যাগ করেন। যদিও অভিযোগ রয়েছে, তারা এখনও বাইরে থেকে ঘুষের টাকা সংগ্রহে সক্রিয় রয়েছেন।

একই অভিযোগ তুলে সিঅ্যান্ডএফ ব্যবসায়ী রুবেল বলেন, “চাকরি করে বেতন না পেলেও এনজিও সদস্যরা কোটিপতি। দামি গাড়ি, বিলাসবহুল বাড়ি—সবই তাদের রয়েছে। কাস্টমস হাউসে চাকরির দোহাই দিয়ে তারা বন্দরজুড়ে প্রভাব বিস্তার করতো।”

জানা গেছে, আমদানি-রফতানি পণ্যের ফাইলপ্রতি নির্দিষ্ট হারে ঘুষ আদায় হতো, যার পরিমাণ ৩০০ টাকা থেকে শুরু করে কোনো কোনো ক্ষেত্রে ২০ লাখ টাকা পর্যন্ত পৌঁছাত। এই ঘুষ আদায়ের দায়িত্ব ছিল কাস্টমস কর্মকর্তাদের নিয়োজিত এনজিও সদস্যদের ওপর। প্রতিটি শুল্ক কর্মকর্তা ১ থেকে ২ জন করে এনজিও সহকারী রাখতেন, যারা ঘুষ আদায়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতেন এবং এর বিনিময়ে মোটা অঙ্কের কমিশন পেতেন।

কমিশনারের দপ্তর থেকে শুরু করে শুল্কায়ন ও পরীক্ষা গ্রুপ পর্যন্ত সব শাখায় দুই থেকে তিনজন এনজিও কর্মীর সক্রিয় উপস্থিতি ছিল। এমনকি বর্তমানে কাস্টমস হাউসে বহিরাগতদের প্রবেশে কড়াকড়ি আরোপ করা হলেও, নয়টি গ্রুপের কিছু কিছু অংশে এখনো এনজিও সদস্যদের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। বিশেষ করে গুরুত্বপূর্ণ ডিটিএম শাখায় প্রতিদিনই তাদের আর্থিক লেনদেন ও কার্যক্রম চলমান রয়েছে।

আমদানিকারক রবিউল ইসলাম বলেন, “ঘুষের কারণে আমদানি ব্যয় বেড়ে যায়, যার প্রভাব পড়ে বাজারে। পণ্য মূল্য বৃদ্ধি পায়।”

সাধারণ ব্যবসায়ী ইদ্রিস আলী জানান, “ঘুষ না দিলে ফাইল দিনের পর দিন আটকে রাখা হতো। প্রতিবাদ করলেই লাইসেন্স বাতিলের হুমকি দেওয়া হতো। আমরা নতুন কমিশনারের কাছে এ দুর্নীতি থেকে মুক্তি চাই।”

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কাস্টমস কর্মকর্তা জানান, অতীতে জনবল সংকটের কারণে খুলনা ও যশোর কাস্টমস হাউস থেকে জনবল ধার করে কাজ চালানো হতো। সে সময় কিছু কর্মকর্তা সুবিধার্থে নিজস্ব আত্মীয় ও পরিচিতদের এনজিও হিসেবে নিয়োগ দেন। বর্তমান কমিশনার এই অনিয়মের অবসান ঘটাতে উদ্যোগী হয়েছেন।

এলাকার খবর

সম্পর্কিত