যশোরের আলোচিত দৈনিক রানার সম্পাদক আর এম সাইফুল আলম মুকুল হত্যা মামলার কার্যক্রম দেড় দশক ধরে হাইকোর্টে আটকে আছে। ফলে হত্যাকাণ্ডের ২৭ বছর পার হলেও ঘাতকরা এখনো আইনের আওতার বাইরে রয়ে গেছে।
আইনজীবীরা বলছেন, উচ্চ আদালতে একটি রিট আবেদন এখনো নিষ্পত্তি না হওয়ায় নিম্ন আদালতে বিচারকাজ এগিয়ে নেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। এতে ক্ষুব্ধ ও হতাশ হয়ে পড়েছেন নিহত সাংবাদিকের পরিবার ও যশোরের সাংবাদিক সমাজ।
১৯৯৮ সালের ৩০ আগস্ট রাতে অফিস শেষে শহর থেকে বেজপাড়ার বাসায় ফেরার পথে চারখাম্বার মোড়ে দুর্বৃত্তদের বোমা হামলায় নিহত হন দৈনিক রানার সম্পাদক সাইফুল আলম মুকুল। পরদিন তার স্ত্রী হাফিজা আক্তার শিরিন যশোর কোতোয়ালি থানায় অজ্ঞাতনামা আসামির বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করেন।
১৯৯৯ সালের ২৩ এপ্রিল সিআইডি যশোর জোনের তৎকালীন এএসপি দুলাল উদ্দিন আকন্দ সাবেক মন্ত্রী তরিকুল ইসলামসহ ২২ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন। পরবর্তীতে আইনি জটিলতায় মামলার কার্যক্রম স্থবির হয়ে যায়।
২০০৫ সালে হাইকোর্টের নির্দেশে মামলাটি পুনরুজ্জীবিত হয় এবং পুনঃতদন্ত শেষে ২০০৬ সালের ১৫ জুন যশোরের স্পেশাল ট্রাইব্যুনাল-৩ ও অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতে চার্জ গঠন করা হয়। তখন মন্ত্রী তরিকুল ইসলামসহ দুইজনকে মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। ২০১০ সালের মধ্যে মামলার ২৫ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণও সম্পন্ন হয়।
কিন্তু পরে সাংবাদিক ফারাজী আজমল হোসেন হাইকোর্টে অব্যাহতির আবেদন করলে মামলার কার্যক্রম ফের আটকে যায়। গত ১৫ বছর ধরে হাইকোর্টে ঝুলে থাকায় বিচারকাজ আর এগোয়নি।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট সৈয়দ সাবেরুল হক সাবু বলেন,“মুকুল হত্যা মামলার বিচারকাজ শেষ পর্যায়ে ছিল। কিন্তু হাইকোর্টে এক আসামির আবেদনের কারণে যুক্তিতর্ক শুরু করা সম্ভব হয়নি। উচ্চ আদালতে রিট নিষ্পত্তি হলেই বিচারকাজ পুনরায় শুরু হবে।”
প্রেসক্লাব যশোরের সভাপতি জাহিদ হাসান টুকুন বলেন,“সাহসী সাংবাদিক সাইফুল আলম মুকুল হত্যার বিচার না হওয়া দুঃখজনক। এতে অপরাধীরা উৎসাহিত হয় এবং সাংবাদিকদের মনোবল ভেঙে পড়ে। সরকারকে দ্রুত বিচার প্রক্রিয়া শুরু করার অনুরোধ জানাই।”
আজ বৃহস্পতিবার (৩০ আগস্ট) শহীদ সাংবাদিক সাইফুল আলম মুকুলের ২৭তম মৃত্যুবার্ষিকী। এ উপলক্ষে প্রেসক্লাব যশোর, যশোর সাংবাদিক ইউনিয়ন ও সাংবাদিক ইউনিয়ন যশোরের উদ্যোগে শোকর্যালি, শহীদ স্মৃতিস্তম্ভে পুষ্পস্তবক অর্পণ ও দোয়া মাহফিলসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করা হচ্ছে।